
রোম, এপ্রিল ২২:
বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন সহনশীলতা, মানবতা ও শান্তির প্রতীক। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্ব নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক শোকবার্তায় বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস মানবতার পক্ষে নিরন্তর কণ্ঠস্বর ছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং শান্তির পক্ষে তার বার্তাগুলো আমাদের সামনে পথ দেখিয়ে গেছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি নিজেও একজন ক্যাথলিক, বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন করুণার প্রতীক। তিনি শুধু ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, ছিলেন আশার আলো, বিশেষ করে নিপীড়িত ও দরিদ্র মানুষের জন্য। তার মৃত্যুতে আমরা এক মহান আত্মাকে হারালাম।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক টুইটে লেখেন, “পোপ ফ্রান্সিস আমাদের সময়ের একজন নৈতিক দিকনির্দেশক ছিলেন। তিনি বারবার বিশ্বকে সহমর্মিতা ও সংহতির পথে আহ্বান জানিয়েছেন।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন শান্তির দূত। ভারতের জনগণের পক্ষ থেকে আমি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।”
যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস বলেন, “তিনি ধর্ম ও সংস্কৃতির সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মানবিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিয়েছেন।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, “তিনি ছিলেন একান্তভাবে মানুষের পক্ষে কথা বলা একজন নেতা। শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অপরিসীম।”
প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেন, “ফ্রান্সিস শান্তির বার্তা ছড়িয়েছেন এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধানে আন্তরিক ভূমিকা রেখেছেন।”
আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে জন্ম নেওয়া হোর্হে মারিও বেরগোলিও ২০১৩ সালে ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম পোপ হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ইতিহাসের প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ, এবং প্রথম জেসুইট সদস্য হিসেবে এই পদে অধিষ্ঠিত হন। তার নেতৃত্বে চার্চ আরও আধুনিক, সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
তিনি বারবার জলবায়ু পরিবর্তন, শরণার্থী সমস্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তার বিখ্যাত পাপাল এনসাইক্লিক্যাল Laudato Si’ বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা জাগাতে ভূমিকা রেখেছে।
বিভিন্ন দেশের গির্জাগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ভ্যাটিকানে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে এবং কয়েকদিনব্যাপী শোক পালন চলছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ভিড় করেছেন।
বিশ্বের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইহুদি ধর্মীয় নেতারাও পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও আন্তঃবিশ্বাস সংলাপকে তিনি যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন সবাই।
ভ্যাটিকানের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এতে অংশগ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এই যুগের এক উজ্জ্বল আলো, যিনি শুধু ধর্ম নয়, মানবতাকেও অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার মৃত্যু বিশ্ববাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, তবে তার বার্তা ও আদর্শ যুগ যুগ ধরে পথ দেখাবে।