

নিজস্ব প্রতিবেদন:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আট মাস পার হলেও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এখনও পূর্ববর্তী স্বৈরশাসনের ছায়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা এখনও অধিদপ্তরে সক্রিয়। এই সিন্ডিকেটবাজ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে অধিদপ্তরের নিয়োগ, বদলি, কেনাকাটা, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি এ রকম একটি পদায়ন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের স্মারক নং ৫৮.০০.০০০০.১৯.০০১.১৭-১০৫ অনুযায়ী মিরপুর ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ মো. ওহিদুল ইসলামকে উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদে পদায়ন করা হয়েছে। এই আদেশে স্বাক্ষর করেন উপসচিব মো. শফিকুল ইসলাম।
মো. ওহিদুল ইসলামের পূর্ববর্তী কর্মকাণ্ডের কারণে এ পদায়নে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, তিনি এর আগে একই পদে দায়িত্ব পালনকালে কর্তৃত্ববাদী আচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তিনি পূর্বেও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনিরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে তিনি নিয়োগ বাণিজ্যে জড়ান। শুধু তাই নয়, বর্তমান পদায়নকেও অনেকে সিন্ডিকেটের চাপ ও আর্থিক লেনদেনের ফল বলেই দেখছেন।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের এক প্রভাবশালী পিএস, যিনি শিগগিরই বিদেশ মিশনে যাচ্ছেন, তার সহায়তায় এই বদলি কার্যকর হয়। ১৭ এপ্রিল বিকালে তাকে শ্যামলীর এক ঠিকাদার, কিছু প্রবাসী বন্ধু ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা যেতে পারে—যা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যাচাই করা সম্ভব।
মো. ওহিদুল ইসলামের পূর্ববর্তী কর্মস্থল ও পদসমূহের তালিকায় দেখা যায়, তিনি নানা সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের অনুগত থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থে সম্পদ গড়েছেন। তার নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জমি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সৎ ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের মতে, মো. ওহিদুল ইসলামের পুনঃপদায়নে প্রতিষ্ঠানটি ফের দুর্নীতির বলয়ে জড়িয়ে পড়বে। তারা এই আদেশ বাতিল করে সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি।